রবিবার ১২ মে ২০২৪
Online Edition

করোনা ভাইরাস নিয়ে সারাবিশ্বে আতঙ্ক শুরু হলেও  বাংলাদেশ ভালো আছে ঘাবড়ানোর কিছু নেই  --- প্রধানমন্ত্রী 

 

স্টাফ রিপোর্টার: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, করোনা ভাইরাস নিয়ে সারাবিশ্বে আতঙ্ক শুরু হয়ে গেছে। বাংলাদেশ এখনো ভালো আছে, ঘাবড়ানোর কিছু নেই। কিন্তু আরও ভালো থাকার জন্য আমাদের আরো সচেতন হতে হবে।

গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে গণভবনে মুজিববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে ‘পরিচ্ছন্ন গ্রাম-পরিচ্ছন্ন শহর’ কর্মসূচির আওতায় দেশব্যাপী পরিছন্নতা কার্যক্রমের উদ্বোধনের সূচনা বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এ সব কথা বলেন।

কর্মসূচির উদ্বোধন ঘোষণা শেষে প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কয়েকটি বিভাগীয় শহরে সংযুক্ত হয়ে মতবিনিময় করেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘সবাইকে আমি অনুরোধ করব, হাঁচি-কাশি এলে আপনারা হাতের তালু না নিয়ে হাতের মাধ্যমে, কনুই ব্যবহার করেন। হাত মেলানো, কোলাকুলি করা বা কাউকে জড়িয়ে ধরা এগুলো বন্ধ রাখতে হবে। কখন কার মাঝে যে এই রোগ আছে আর কখন চলে আসবে, এটি কেউ বলতে পারে না। সে জন্য সবাইকে এ ব্যাপারে সচেতন থাকা দরকার।’

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘জাতির পিতা এই বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছিলেন এবং দেশের মানুষকে উন্নত সমৃদ্ধ জীবন দিতে চেয়েছিলেন। আমরা তারই আদর্শ নিয়ে দেশ পরিচালনা করছি। আমরা চাই, বাংলাদেশকে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসাবে গড়ে তুলতে। বাংলাদেশকে আর কেউ কোনোভাবে যেন অন্য চোখে দেখতে না পারে। বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী আজকে যে সম্মান পেয়েছে, সেই সম্মান ধরে রেখে এগিয়ে যাবে। আমরা বিজয়ী জাতি হিসেবে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে সম্মানের সঙ্গে চলতে চাই।’

দেশকে সুন্দভাবে গড়ে তুলতে হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে গেলে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এটি আমাদের সকলের জন্য দরকার। আমাদের ধর্মেও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কথা বলা আছে। আমরা চাই যে, দেশের মানুষ সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকবে। এটা শুধু দেশ বলে না, প্রত্যেকটা মানুষের ব্যক্তিগত জীবনেও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার প্রয়োজনীয়তা রয়ে গেছে। নিজে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা না থাকলে আশপাশের মানুষগুলো ভালো থাকতে পারবে না।’

বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘এখন জানেন যে, সারা বিশ্বব্যাপী একটি আতঙ্ক শুরু হয়ে গেছে। সেটি হচ্ছে করোনাভাইরাস। করোনাভাইরাসটা ছড়িয়ে পড়েছে, হয়ত মৃতের সংখ্যা তেমন না কিন্তু আতঙ্ক অনেক বেশি। সেই জন্য আমি সবাইকে বলব যে, এখান থেকেও আমাদের দেশকে মুক্ত রাখতে হবে। এরইমধ্যে বিদেশ থেকে আসা আমাদের দুই জন নাগরিক তাদেরকে আমরা শনাক্ত করেছিলাম। তাদের চিকিৎসা করা হয়েছে। একজন সংক্রমিত হয়েছিল। বাকিরা ভালো আছে। ভালো সবাইকে রাখতে হবে। সেটিও মাথায় রাখতে হবে।’

এরইমধ্যে প্রায় ১১৪টার মতো দেশে এই কেভড-১৯ বা করোনাভাইরাস দেখা দিয়েছে এবং বাংলাদেশকে এই ভাইরাসের আক্রমণ থেকে প্রতিরোধ করার জন্য সর্বাত্মকভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে অবহিত করেন সরকার প্রধান শেখ হাসিনা।

যদি কেউ কখনো মনে করেন, কেউ সংক্রামিত হয়েছে বা তার কোনোরকম নমুনা দেখা দিচ্ছে, সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়ার আহ্বান জানান তিনি। কোনোরকম উপসর্গ দেখা দিলে সেটি না লুকিয়ে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসককে দেখানোর পরামর্শ দেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পরিচ্ছন্নতার জন্য একটি ব্যবস্থা নিচ্ছি বা মানুষের মাঝে জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে চাচ্ছি। এটির কারণ হচ্ছে যে, আমাদের দেশের সব মানুষই সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হোক। কারও রোগ যেন আরেকজনের শরীরে সংক্রমিত না হয়।’

খোলা বাতাস একান্তভাবে প্রয়োজন। আজকে অবশ্য যারা একটু অর্থশালী তাদের আবার এসি রুমে থাকার প্রবণতা একটু বেশি। এতে একজনের রোগ আরেকজনের কাছে খুব দ্রুত সংক্রমিত হয়। কিন্তু যতবেশি আমরা খোলা বাতাসে থাকতে পারব বা বাতাস আসার একটা সুযোগ করতে পারব? ততই কিন্তু আমরা ভালভাবে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হতে পারব বলেও জানান তিনি।

একেবারে ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা জেলা পর্যায় পর্যন্ত এবং প্রত্যেকটা বিভাগীয় শহর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য সকলকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রত্যেককে সুর্নিদিষ্ট জায়গায় ময়লা ফেলার আহ্বান জানান। একইসঙ্গে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জায়গা সুনির্দিষ্ট থাকার পাশাপাশি রিসাইক্লিং করার জন্য সংশ্লিষ্টদের ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বিশ্ব ব্যাংকের অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণ করে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ সারা বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘আপনারা জানেন, সেতু নির্মাণ শুরু হতে না হতেই ওয়ার্ল্ড ব্যাংক আমাদের ওপর দুর্নীতির দোষারোপ করেছিল। আমি তাদের চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলাম−দুর্নীতি হয় নাই। কানাডার কোর্টে তা প্রমাণিত হয়। এটা আমাদের জন্য অনেক বড় সম্মানের। এই ধরনের একটা অভিযোগ দিয়ে আমাদের চরমভাবে অসম্মান করা হয়েছিল। তাই এটাকে আমি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি। নিজেদের অর্থায়নে সেতুর কাজ শুরু করি। পদ্মা সেতু ছিল আমাদের আত্মসম্মানের ব্যাপার। আমরা যে নিজেরা করতে পারি, এই একটা সিদ্ধান্তে সারা বিশ্বে বাংলাদেশের মানুষের ভাবমূর্তি বৃদ্ধি পেয়েছে।’  প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘পদ্মা সেতুটা কিন্তু একটি ভিন্নধর্মী দোতলা সেতু হচ্ছে। নিচ দিয়ে রেল যাবে, ওপর দিয়ে গাড়ি যাবে। পদ্মা নদীর মতো একটি খরস্রোতা নদীতে এ জাতীয় সেতু নির্মাণ করা একটা বিরাট ঝুঁকির ব্যাপার ছিল। কিন্তু আমরা সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে এই সেতু নির্মাণ করছি।’  

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সমগ্র বাংলাদেশে যোগাযোগের একটা নেটওয়ার্ক তৈরি করে দিচ্ছি। এটা সবক্ষেত্রেই কাজে লাগবে। আর সব থেকে বড় কথা, দক্ষিণাঞ্চলের মানুষরা ছিলাম সবচেয়ে অবহেলিত। ভাঙ্গা পর্যন্ত যেতে হলে একসময় স্টিমার বা লঞ্চে যেতে হতো, আর আমাদের গোপালগঞ্জ যেতে হলে চব্বিশ ঘণ্টা লাগতো। আমি ১৯৮১ সালে যখন ফিরে আসি (বিদেশ থেকে), তখনও সেই অবস্থাই ছিল। যাক, আজকে আর সেই দিন নেই। আমরা ১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পর থেকে সারা বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য কাজ শুরু করি। আর দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসে পরিকল্পনামতো সমগ্র বাংলাদেশে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করে যাচ্ছি।’

এসময় তিনি আরও বলেন, ‘আমি প্রথমবার সরকার গঠন করে জাপান যাই। তখন পদ্মা ও রূপসা সেতু নির্মাণের জন্য তাদের অনুরোধ করেছিলাম। বঙ্গবন্ধুও ১৯৭৩ সালে জাপান সফরে গিয়ে যমুনা সেতু নির্মাণের কথা বলেছিলেন। তারই পরিপ্রেক্ষিতে যমুনা সেতু নির্মাণের ফিজিবিলিটি স্টাডি করে দেয় জাপান। যার পরিপ্রেক্ষিতে পরে যমুনা সেতু নির্মাণ করা হয়। পরে জাপানই পদ্মা সেতুর ফিজিবিলিটি স্টাডিও করে দেয়।’

নতুন উদ্বোধন করা আধুনিক এক্সপ্রেসওয়ের দু’টি অংশ ৬.১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতুর মধ্য দিয়ে সংযুক্ত হবে, যা বর্তমানে নির্মাণাধীন রয়েছে। 

উল্লেখ্য, আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত ৫৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এক্সপ্রেসওয়ে দু’টি সার্ভিস লেনের মাধ্যমে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানীকে যুক্ত করছে। মাওয়া থেকে ৩৫ কিলোমিটার দীর্ঘ যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা এবং পানছার থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ দু’টি এক্সপ্রেসওয়ে পুরো খুলনা ও বরিশাল বিভাগ এবং ঢাকা বিভাগের একটি অংশের উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে। বরিশাল বিভাগের ছয় জেলা, খুলনা বিভাগের ১০ জেলা এবং ঢাকা বিভাগের ছয় জেলাসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২২ জেলার মানুষ সরাসরি এই এক্সপ্রেসওয়ে থেকে উপকৃত হবেন। 

যাত্রাবাড়ী-মাওয়া-ভাঙ্গা রুটে দেশের প্রথম এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, রাজধানীর সঙ্গে বৃহত্তর খুলনা ও বরিশাল অঞ্চলের জনগোষ্ঠীর নিরবচ্ছিন্ন যাতায়াত নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত ৫৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করার ফলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোর মানুষের যাতায়াত এখন আরও সহজ হয়ে উঠবে। এই এক্সপ্রেসওয়ের দু’টি অংশ ৬.১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতুর মধ্য দিয়ে সংযুক্ত হবে, যা বর্তমানে নির্মাণাধীন রয়েছে। 

এসময় গণভবন থেকে তৃতীয় কর্ণফুলী সেতু নির্মাণ (সংশোধিত) প্রকল্পের আওতায় ৬ লেন বিশিষ্ট ৮ কিলোমিটার তৃতীয় কর্ণফুলী (শাহ আমানত সেতু) সেতু অ্যাপ্রোচ সড়ক এবং ওয়েস্টার্ন বাংলাদেশ ব্রিজ ইমপ্রুভমেন্ট প্রকল্পের আওতায় খুলনা, বরিশাল ও গোপালগঞ্জ সড়ক জোনে নির্মিত ২৫টি সেতু এবং ঢাকা-খুলনা জাতীয় মহাসড়কের (এন-৮) যাত্রাবাড়ী ইন্টারসেকশন থেকে (ইকুরিয়া-বাবুবাজার লিংক সড়কসহ) মাওয়া পর্যন্ত এবং পাচ্চর-ভাঙ্গা অংশ ধীরগতির যানবাহনের জন্য পৃথক লেনসহ ৪ লেনের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। 

দেশের প্রথম এই এক্সপ্রেসওয়ে দু’টি সার্ভিস লেনের মাধ্যমে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানীকে যুক্ত করেছে। এক্সপ্রেসওয়েতে পাঁচটি ফ্লাইওভার, ১৯টি আন্ডারপাস এবং প্রায় ১০০টি সেতু এবং কালভার্ট রয়েছে।

মাওয়া থেকে ৩৫ কিলোমিটার দীর্ঘ যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা এবং পানছার থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ দু’টি এক্সপ্রেসওয়ে পুরো খুলনা ও বরিশাল বিভাগ এবং ঢাকা বিভাগের একটি অংশের উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে।

বরিশাল বিভাগের ছয় জেলা, খুলনা বিভাগের ১০ জেলা এবং ঢাকা বিভাগের ছয় জেলাসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২২ জেলার মানুষ সরাসরি এই এক্সপ্রেসওয়ে থেকে উপকৃত হবেন।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ